আলপনা কথাটির আভিধানিক অর্থ ‘মাঙ্গল্য চিত্র’। পুরোনো বাংলায় একে ‘আলিপনা’-ও বলা হত, যার অর্থ ‘পিটুলি দ্বারা দেবস্থান গৃহদ্বারাদি লেপন বা চিত্রকরণ’। এটিকে সংস্কৃত আলিম্পন-শব্দজাত বলেও মনে করা হয়। এর সঙ্গে আইল প্রস্তুত করার সম্পর্কের কথাও বলেন অনেকে। প্রাচীন কৃষি সভ্যতার সঙ্গে একটা সম্পর্কের সূত্র উঠে আসে এ থেকে। ভারতবর্ষের নানা অঞ্চলে আলপনার প্রচলন আছে। যেমন বিহার বা উত্তরপ্রদেশে বলে ‘আরিপন’, রাজস্থান ও মধ্যপ্রদেশে ‘ওসা’ বা ‘ঝঙ্গতি’, তামিলনাড়ু ও কেরলে ‘কোলম’ ইত্যাদি। উৎসব ও মঙ্গলকার্যে ব্যবহৃত এই শিল্পরূপটি প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকে ধীরে ধীরে বিবর্তিত হয়ে আজকের জায়গায় এসে পৌঁছেছে। শুরুতে জাদু-প্রক্রিয়ার থেকে উদ্ভূত হয়েছিল এই রূপ। এখনও ‘জাদু’-র সঙ্গে সেই সম্পর্ক লুপ্ত হয়নি। লক্ষ্মীপূজোয় বা বিভিন্ন ব্রতে যে আলপনা দেওয়া হয়, তাতে বৈভবের দেবীকে আবাহন ও পারিবারিক মঙ্গল কামনার অনুষঙ্গ থাকেই। আলপনা মূলত অলঙ্করণ শিল্প। সব সময় তা বিমূর্ত নয়। লৌকিক আলপনায় কিছু আখ্যানের আভাসও থাকে। যেমন সাঁঝপূজানী ব্রতের আলপনা, সুবচনীর ব্রতে পাখিদের উড়ে আসা, ‘হাতে পো কাঁখে পো’ আলপনায় গাছের ডালে ঝুলে থাকা মানব শিশুর প্রতিমাকল্প।
অবনীন্দ্রনাথ তাঁর ‘বাংলার ব্রত’ পুস্তিকায় লিখেছিলেন ‘খাঁটি মেয়েলি ব্রতগুলিতে, তার ছড়ায় এবং আলপনায় একটি জাতির মনের, তাদের চিন্তার, তাদের চেষ্টার ছাপ পাই’। আলপনা ধীরে ধীরে লৌকিক স্তর থেকে ধ্রুপদী স্তরে রূপান্তরিত হয়েছে। অজন্তার ছবির অলঙ্করণে, রাজস্থানি বা পাহাড়ি অনুচিত্রে এর অনেক নিদর্শন পাওয়া যায়।